হামলা, তাণ্ডব, লুটপাট, ঘরে অগ্নিসংযোগ এবং দুই তরুণী গৃহবধূর শীলতাহানি ঘটিয়ে ঘের দখল ঘটনার অভিযোগ কেন পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে করা হলো⎯ এই হুমকি দিয়ে খোদ ওসিই শাসালেন⎯ এই বেটি তোরা রাতভর এইহানে কি করিস আমি জানিনা। এইহানে থাকলে তোদের ঘর আমিই আবার পুড়ামু। গতকাল রোববার এই ঘটনা ঘটে দেবহাটার নোড়ার আবাদে। ওসির শাসানিতে ভীত সংখ্যালঘু পরিবারটি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে তাদেরই দায়ের করা মামলার বাদীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সংশি−ষ্ট এলাকায় গিয়ে শীলতাহানির শিকার গৃহবধূদের কেবলই মুখ লুকিয়ে থাকতে দেখা গেছে। জানা যায়, দেবহাটার নোড়ার আবাদের ৩২ বিঘা জমি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে নিরঞ্জন ও পরিতোষ বিশ্বাসের পরিবার জয়ী হয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ ভোগদখল করে আসছিল। কিছুদিন আগে চিংড়ি ঘের জমির একাংশ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান যুবদল ক্যাডার গোলাম ফারুক বাবু তার লোকজন নিয়ে দখল করে নেয়। নিরঞ্জন ও পরিতোষ এই জমি লাঠিয়াল বাহিনীর কবল থেকে ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়ে সাম্প্রতিককালে সেনাসদস্যদের শরণাপন্ন হয়। সেনা সদস্যরা দুই পক্ষকে ডেকে এর ১৬ বিঘা জমির টাকা নিরঞ্জন ও পরিতোষের অনুক‚লে দিতে বাধ্য করান।
এদিকে গত ৯ জানুয়ারির পরপরই সেনা সদস্যরা চলে যাওয়ায় চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনী মরিয়া হয়ে ওঠে। অভিযোগে প্রকাশ, গত শনিবার চেয়ারম্যান সমর্থিত তিন ক্যাডার সিরাজুল, মোশাররফ, আলতাফ ও আসাদুল ৩০/৩৫ জন দাঙ্গাবাজ লাঠিয়ালকে নিয়ে হামলা করে। তারা নিরঞ্জন, পরিতোষকে বেপরোয়া মারপিট করে আহত করে। সেখানে ৩ জনের স্ত্রীকে পাশের একটি ঘরে ধরে নিয়ে শীলতাহানি ঘটায়। এতে বাঁধা দিতে যাওয়ায় হামলাকারীরা বাতাসি (৫০), গান্ধারি (৬০), দিপালীসহ কয়েকজনকে মারধর করে ঘেরের কাদাজলে ঠেসে ধরে। এদের কয়েকজনের মাথার চুল ও পরণের কাপড় চোপড়ও টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় পুরো ঘেরে তারা দখল কায়েম করে। তাদের বাসাবাড়িতে সন্ত্রাসীরা আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনার পর পরিতোষ বিশ্বাস দেবহাটা থানায় মামলা করতে গেলে ওসি তাদের ফিরিয়ে দেয়। পরে চেয়ারম্যান গোলাম ফারুকের কর্মচারী মনিন্দ্রের দায়ের করা উল্টো মামলা গ্রহণ করে। এ মামলার আসামি পরিতোষকে ডেকে নিয়ে তার দেওয়া সাতজন আসামির নামে একটি মামলা নিয়ে বাদী পরিতোষকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। মনিন্দ্রকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করে। আহতরা বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছে।
এদিকে এই তাণ্ডবলীলার পর দেবহাটার ওসি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে হুমকি দিয়ে বলেছেন⎯ তোরা এ ঘটনা সাংবাদিকদের জানালি ক্যান? শীলতাহানির শিকার গৃহবধূদের উদ্দেশে তিনি বলেন⎯ এই বেটি তোরা রাতভর এই বিলে কি করিস আমি জানিনা? এইহানে থাকলে তোদের ঘর আমিই পুড়ামু। ওসির এই হুমকির মুখে ওরা সবাই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। অপরদিকে আহত পরিতোষ আটক রয়েছে এখনো। গতকাল সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খোন্দকার ফারুক আহমেদ ঘটনাস্থল সফর করেছেন।
ভোরের কাগজ, ২০ জানুয়ারি ২০০৩