বিশ্বকাপ নিয়ে মানুষের উন্মাদনা আর কাফির-ফাসিক খেলোয়াড়কে সাপোর্ট করার সাথে ইসলামি আকিদার গভীর সম্পর্ক আছে। জি, এটাকে ওয়ালা ও বারা তথা মিত্রতা ও বৈরিতার আকিদা বলা হয়। বর্তমান সময়ে মুসলিম সন্তানদেরকে এই আকিদা শেখানো যে কত জরুরি তা বলে বোঝানো যাবে না। এই আকিদার ব্যাপারে অজ্ঞ কিংবা গাফেল কাউকে হয়তো এমন পাবেন, সে ভেতরে ভেতরে সমকামী সেলিব্রেটিদের ভালোবাসে, সমকাম করার অধিকার তাদের আছে বলে মনে করে। আমাদের খবরই নাই, অথচ দেখা যাবে, আমাদেরই ছেলেমেয়ে, ভাইবোন মুরতাদ হয়ে বসে আছে। এজন্য, সন্তানদের শেখান, বিধর্মী কাফিরদেরকে ঘৃণা করতে হয়। কাফিরদের যতই ভালো কাজ থাকুক না কেন, তারা কাফির হওয়ার কারণে আল্লাহর শত্রু; তাদেরকে ঘৃণা করা আবশ্যক।
কাফিরদেরকে ভালোবাসার বিধান তিন ধরনের। যথা:
১. কাফিরদের ধর্মের কারণে তাদেরকে ভালোবাসা। এই ভালোবাসা পোষণ করলে ব্যক্তি কাফির হয়ে যায়।
২. স্বভাবজাত ভালোবাসা। যেমন সন্তান তার পিতাকে ভালোবাসে। আমাদের প্রিয় নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিধর্মী পিতৃব্য আবু তালিবকে ভালোবেসেছেন। স্বয়ং আল্লাহ জানিয়েছেন এ কথা কুরআনে। [সুরা কাসাস: ৫৬]
৩. ধর্মের কারণেও নয়, আবার না চাইতেই অন্তরে উদ্রেক হওয়া স্বভাবজাত ভালোবাসাও নয়, এমন ধরনের ভালোবাসা। এই ভালোবাসা দুনিয়াবি স্বার্থে বা অন্য কোনো কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে অর্জন করতে হয়। এরূপ ভালোবাসা হারাম। [বিস্তারিত দেখুন: শাইখ সুলাইমান আর-রুহাইলি কৃত আল-ইফাদাতু ওয়াল ইলাম বি ফাওয়ায়িদি রিসালাতি নাওয়াকিদিল ইসলাম, পৃষ্ঠা: ৪৬-৪৭]
দুটো আয়াত লিখে দিচ্ছি এখানে। নিজে অনুধাবন করে পড়বেন, পরিবারকেও পড়ে শোনাবেন। মহান আল্লাহ বলেছেন,
لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ ۚ أُولَٰئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِنْهُ ۖ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ۚ أُولَٰئِكَ حِزْبُ اللَّهِ ۚ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ.
“আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী এমন কোনো সম্প্রদায় তুমি পাবে না যারা আল্লাহ ও তাঁর রসুলের বিরোধিতাকারীদেরকে ভালোবাসে, হোক না এই বিরোধীরা তাদের পিতা অথবা পুত্র অথবা তাদের ভাই অথবা তাদের জ্ঞাতিগোষ্ঠী। আল্লাহ এদের অন্তরে (যারা বিধর্মীদের ভালোবাসে না তাদের অন্তরে) ইমানকে বদ্ধমূল করে দিয়েছেন, আর নিজের পক্ষ থেকে রুহ (ইলাহি সাহায্য) দিয়ে তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন। তাদেরকে তিনি দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশ দিয়ে বয়ে চলেছে নদী-নালা, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, আর তারাও সন্তুষ্ট তাঁর প্রতি। এরাই হলো আল্লাহর দল; জেনে রেখ, আল্লাহর দলই সফলকাম।” [সুরা মুজাদালা: ২২]
আল্লাহ আরও বলেছেন,
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّىٰ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَه.
“ইবরাহীম ও তার সঙ্গী-সাথীদের মধ্যে তোমাদের জন্য আছে উত্তম আদর্শ। যখন তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিল, ‘তোমাদের সঙ্গে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে তোমরা যাদের ইবাদত করো তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের আর তোমাদের মাঝে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ শুরু হয়ে গেছে, যতক্ষণ না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ইমান আনবে’।” [সুরা মুমতাহিনাহ: ৪]
নিজেদের ইমান বাঁচাতে এবং পরিবারপরিজনকে মুরতাদ হওয়া থেকে বাঁচাতে আকিদার পঠনপাঠন জারি করুন। ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব বিরচিত ‘তিনটি মূলনীতি’ কিতাবের আলোচনা পরিবারের মাঝে প্রচার করুন। আল্লাহ আমাদের সুবুদ্ধি দান করুন, আমিন।